জেনে নিন, করোনার লক্ষণ কী কী
করোনা ব্যাপারটাই এখন আতংকের বিষয় হলেও করোনার লক্ষণ কী কী জানলে ব্যবস্থা নেয়ার তবু সুযোগ থাকে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনে প্রথম কোভিড – ১৯ ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়ে এখন পুরো পৃথিবীতেই মহামারী রূপে দেখা দিয়েছে। ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই ঘাতক ভাইরাস থেকে সাবধানে থাকতে যেমন সামাজিক দূরত্ব ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে সচেতনতা যেমন জরুরী, তেমনি যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই যায়, শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা যায়, সেজন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষ্মণগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকাও জরুরী।
আরও দেখুনঃ বিজ্ঞান কি ও বিজ্ঞান কাকে বলে?
করোনার লক্ষণ কী কী?
যেসব লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন করোনা হয়েছে কিনা, আমরা করোনা ভাইরাসের সেইসব সাধারণ এবং বিরল সব লক্ষণ নিয়েই আলোচনা করবো। আসুন জেনে নিই করোনার লক্ষণগুলো
করোনার সাধারণ লক্ষণ
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ খুবই সাধারণ, সর্দি কাশির মতো ছাপোষা অসুখ, যাতে সিংহভাগ সময়ে আমরা ঘরে থাকা মেডিসিন বক্সের চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যাই, সেই রোগেরই লক্ষণ। কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, সাধারণ সর্দি কাশি সময়ের সাথে সাথে ভালো হয়ে গেলেও করোনা আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে অক্সিজেন দ্রুত কমতে থাকে। তাই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে কিংবা কোন জটিল রোগে পূর্বে থেকেই আক্রান্ত থাকলে ভাইরাসটি রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হয়ে দাড়ায়।
সর্দি কাশির সাথে সাথে করোনায় মাথাব্যথা, শুস্ক কাশিও হতে পারে। প্রায় সবার ক্ষেত্রেই শরীরের মাংস পেশীতে ব্যাথা অনুভবের কথা শোনা যায়। এছাড়া রোগী প্রচন্ড দূর্বল ও ক্লান্ত অনুভব করে। প্রায় সবাইই মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট অনুভব করে।
করোনার বিশেষ লক্ষণ
করোনা ভাইরাসটি খুব দ্রুত নিজেদের স্ট্রেইন বদলায় বলে রোগের লক্ষণও বদলাতে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রেই এখন দেখা যাচ্ছে বিশেষ কিছু লক্ষণ, যেমন, খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারা, কোনকিছুর গন্ধ না পাওয়া, মাথা ঘোরা, গলা ব্যথা ইত্যাদি। শরীরের ত্বকে র্যাশও হচ্ছে অনেকেরই। এছাড়া কফ কিংবা কফের সাথে রক্ত, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের লক্ষণ নিয়েও পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ ধরা পড়ছেন অনেকেই।
করোনার বিরল লক্ষণ
কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণগুলোই মৃদু থেকে জোরালো রূপে বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের হাসাপাতাল থেকে কিছু অদ্ভুত লক্ষণের দৃষ্টান্তও প্রায়ই দেখা যাচ্ছে এখন।
নীলাভ ঠোঁট – যেহেতু ঠোঁটের ত্বক খুবই পাতলা, তাই রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে ঠোঁট নীলাভ হয়ে যেতেই পারে এবং হচ্ছে অনেকের ক্ষেত্রেই।
বুকে ক্রমাগত চাপ অনুভব করা – হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ায় অনেকেই বুকে চাপ ও ব্যথা অনুভব করে।
আচমকা বিভ্রান্তি – প্রায় অনেক কোভিড আক্রান্তরই এই অভিজ্ঞতা হয়, ঘুম থেকে উঠে কিংবা খুব মনোযোগ দিয়ে কোন কিছু করে শেষ করার পর হুট করেই বিভ্রান্ত হয়ে যায়, কি করবে, কোথায় যাবে এমন কি সে নিজে কে এমন বিভ্রান্তিতেও পড়ে অনেকে। এই বিভ্রান্তি দীর্ঘ সময় থাকলে তা থেকে প্যানিক এ্যাটাক হওয়াও খুব স্বাভাবিক।
জেগে থাকায় সমস্যা – যে কোন রোগেই জ্ঞান হারানো ভয়ংকর লক্ষণ, করোনায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। ঘুম থেকে উঠতে বা জেগে থাকতে জটিলতা দেখা দিলে মুহূর্ত দেরী না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, স্নায়ু দূর্বলতা, স্মরণশক্তি লোপ ইত্যাদির কথাও বলে থাকেন কেউ কেউ।
শেষ কথা
বেশীরভাগ মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠলেও মৃত্যুর সংখ্যাটাকেও অবহেলার উপায় নেই। তাই উপরের যে কোন লক্ষণ দেখা দিলেই তাকে গুরুত্ব দেয়া এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়া জরুরী, আর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে আইসোলেটেড করে আশেপাশের মানুষকে রক্ষা করার সাথে সাথে ভাইরাস ছড়িয়ে বেড়ানো বন্ধ করাও সবারই কর্তব্য।