বিজ্ঞান কি ও বিজ্ঞান কাকে বলে?
বিজ্ঞান কি ও বিজ্ঞান কাকে বলে তা বোঝার জন্য তাত্ত্বিক হওয়ার প্রয়োজন নেই। সৃষ্টির সূচনা লগ্নে মানুষ আর পশুর জীবন যাপনে তেমন কেন পার্থক্য ছিল না। পশু আর মানুষের যাপিত জীবনের তখন একটাই লক্ষ্য, নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মানুষ ক্রমশ নিজেকে, নিজেদের জীবনযাপনকে উন্নত করেছে অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহার করে। পৃথিবীর অন্য সবকিছুকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করে মানুষ নিজেদের জীবনকে করে নিয়েছে আরামদায়ক নিরাপদ। নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রাণী রূপান্তরে মূল ভূমিকা যে বিশেষ জ্ঞানের, তাই বিজ্ঞান।
বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ও উৎপত্তি
ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া – Scientia থেকেই মূলত ইংরেজী সায়েন্স – Science শব্দের উৎপত্তি। ল্যাটিন সায়েনটি শব্দের অর্থ Knowledge – জ্ঞান। তাই বাংলায় সায়েন্স শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ জ্ঞান হলে মূলত তাকে ধরা হয় বিশেষ জ্ঞান হিসেবে। বাংলায় এই বিশেষ জ্ঞান থেকেই সংক্ষিপ্ত হয়ে এসেছে বিজ্ঞান শব্দটি।
Check also: Moeen Ali Net Worth
বিজ্ঞান কী?
শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে যে কোন বিশেষ জ্ঞানকেই বিজ্ঞান বলা হলেও তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিজ্ঞান বিষয়টি অনেক বেশী বিস্তৃত।
বিশ্বের যাবতীয় ভৌত বিষয়ের ওপর পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা, যাচাই, শুদ্ধিবিচার করার নিয়মসিদ্ধ, বিধিবদ্ধ ও গবেষণালব্ধ পদ্ধতি যা জ্ঞানকে সঠিক ও সুশৃঙ্খল করে তোলে, তাইই বিজ্ঞান।
অর্থাৎ ভৌত বিশ্বের যে সকল কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য এবং যাচাইয়ের যোগ্য, তার একটি সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে তৈরী জ্ঞানভান্ডারের নাম বিজ্ঞান।
অথবা আরও সহজ এবং অর্থগত দিক থেকে প্রাসঙ্গিক করে বললে, বিজ্ঞান শব্দের বিশ্লেষিত রূপ বি+জ্ঞান। ‘বি’ অর্থ বিশেষ আর ‘জ্ঞান’ এর অর্থ সম্যক ধারণা। সুতরাং বিজ্ঞান শব্দের অর্থ দাড়াচ্ছে ‘বিশেষ সম্যক ধারণা’।
বিশ্বজগতে কোন কিছুই বিনাকারণে সংগঠিত হয় না। যাবতীয় কর্মকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পেছনে কোন না কোন কারণ থাকেই। এসব কর্মকান্ডের কারণ অনুসন্ধানের জন্য মানুষ বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আর এসব পরীক্ষা নিরিক্ষার ফলে অর্জিত হয় নতুন নতুন জ্ঞান, তৈরী হয় নতুন জ্ঞান ভান্ডার। এ জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াই হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানুষকে নতুন কিন্তু টেকসই ধারণার সন্ধান দেয়।
এ আলোচনা থেকেই আমরা বুঝতে পারছি, ব্যাপক অর্থে যে কোন প্রকার জ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বিজ্ঞান বলা হলেও বিজ্ঞান শব্দটি আরো সূক্ষ্ম অর্থে ব্যবহার করা হবে।
বিজ্ঞানের প্রকারভেদ
যে কোন ভৌত বিষয়ের উপর গবেষণাকে বিজ্ঞান বললেও মোটা দাগে একে দুইটি ক্ষেত্রে বিভক্ত করা যায়, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান।
পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যাসহ এই ধরণের বিষয়কে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা হয়। মানুষের আচার ব্যবহার এবং সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ে যে গবেষণা, পর্যালোচনা হয়, তাকে সামাজিক বিজ্ঞান বলে।
কোন কোন তাত্ত্বিক অবশ্য গণিতকে বিজ্ঞানের তৃতীয় ক্ষেত্র হিসেবে দেখতে আগ্রহী৷ তাদের সংজ্ঞায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান এবং গণিত এই তিন প্রকার মিলেই বিজ্ঞানের বিরাজ।
এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক এবং সামাজিক বিজ্ঞানকে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান বা Empirical Science বলে। অন্য দিকে গণিতকে বলা হয় ফরমাল সায়েন্স (Formal Science)।
গণিতবিদরা এ দিক থেকে যেন আরো এক কাঠি বেশী সরস। তাদের মতে, শুধু গণিত দিয়ে পৃথিবীর যে কোন রহস্যের জবাব দেয়া সম্ভব। অর্থাৎ সকল বিজ্ঞানের মাতৃ বিজ্ঞান হচ্ছে গণিত। যে বিজ্ঞান নিয়ে যত গবেষণাই করুক, তাদের কথামত দিন শেষে ফিরতে হবে গণিতেরই আশ্রয়ে।
বিজ্ঞানের অবদান
বিজ্ঞানের প্রায় সব বিষয় নিয়েই বিতর্ক রয়েছে, বিতর্ক থেকেই গবেষণা করা আর নিজের ধারণাকে প্রমাণের চেষ্টা, এভাবেই তো জ্ঞানের ভান্ডারের সমৃদ্ধ হওয়া আর বিজ্ঞানের এগিয়ে চলা। তবে যত বিতর্কই থাকুক, আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান নিয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ নেই। জৈবিক কিংবা মানসিক যে কোন চাহিদা পূরণে বিজ্ঞানই শেষ আশ্রয়স্থল।
বেঁচে থাকতে খাদ্য উৎপাদন কিংবা বেঁচে থাকার আশ্রয় মাথার ওপরে ছাদ, সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান। প্রযুক্তির কল্যাণে চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, নিরাপত্তার মতো মৌলিক বিষয় তো বটেই, বিনোদনের জন্যও বিজ্ঞানের অগ্রগতি অবিশ্বাস্য।
আর বিজ্ঞানের চিরকালীন ক্ষেত্র কৌতুহল, তা দমন করতে নতুন রহস্যের উদঘাটন আর নতুন আবিষ্কার তো রয়েছেই।
শেষ কথা
সভ্যতার অগ্রযাত্রায় আমরা যে জায়গায় এসে পৌছেছি,বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের একটা বেলাও কি নিজেদের টিকিয়ে রাখা আর এই আধুনিক যুগে সম্ভব?