তারাবির নামাজ কি? তারাবি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি তারাবির নামাজ বিষয়ক আজকের আলোচনায় যেখানে আমরা প্রথমেই জানব তারাবির নামাজ কি। এছাড়াও আমরা তারাবি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ। এ্ পবিত্র মাহে রমজানে তারাবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত যা আমাদের অবশ্যই পালন করা উচিত।
তবে অনেকেই তারাবি নামাজের সঠিক নিয়ম এবং গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে তারাবির নামাজকে অবহেলা করে থাকেন যা কোনভাবেই উচিত নয়। তাই আসুন আমরা সকলেই তারাবির নামাজের যথাযথ গুরুত্ব ও এর অপরিসীম ফজিলত সম্পর্কে জেনে নেই এবং এই ইবাদতটি পালনে সচেষ্ট হই। চলুন শুরু করা যাক।
আরও দেখুনঃ রমজানের সময়সূচি ২০২৪ : সেহরি ও ইফতার সময় দেখুন
তারাবির নামাজ কি?
প্রথমেই চলুন জেনে নেয়া যাক তারাবির নামাজ কি? এই তারাবির নামাজ বা সালাতুত্ তারাবি হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। তারাবি শব্দটি এসেছে আরবি ‘তারবিহাতুন’ ধাতু থেকে যেটির আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম করা বা আরাম করা। তারাবির নামাজ সাধারণত ২০ রাকাত হয়ে থাকে।
এই ২০ রাকাত নামাজ ১০ সালামে আদায় করা হয়। প্রতি চার রাকাত পর পর কিছুক্ষণ বসে দোয়া ও ইস্তিগফার পড়া হয় যাতে একসঙ্গে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে অতিরিক্ত কষ্ট না হয়। যেহেতু চার রাকাত পর পর কিছুক্ষণ সময় বিশ্রাম বা আরাম করা হয়, এজন্যই এই নামাজের নাম সালাতুত্ তারাবি বা তারাবির নামাজ।
তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বিভিন্ন সহীহ হাদিসে তারাবি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা এসেছে। এই তারাবি নামাজ সুন্নত মুআক্কাদা। গুরুত্বের দিক থেকে এই সুন্নত অবশ্য পালনীয় এবং ওয়াজিবের কাছাকাছি। বুঝতেই পারছেন, এই সুন্নত যথাযতভাবে পালন না করা হলে গুনাহ হবে।
এই তারাবি নামাজ শুধুমাত্র পবিত্র মাহে রমজানেই আদায় করা হয়ে থাকে বলে এর গুরুত্ব অন্যান্য যেকোন সাধারণ নামাজের চাইতে অনেক বেশি। কারণ এটি সারা বছরে কেবল রমজানেই আদায় করা যায়। অন্য সময়ে এই নামাজ আদায়ের নিয়ম নেই। তাই আমাদের সকলেরই উচিত পবিত্র রমজান মাসে যথাযথভাবে এই ইবাদতটি পালন করা।
রাসূল (সাঃ) তারাবির নামাজের প্রতি অত্যন্ত জোর দিয়েছেন। তিনি নিজে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তারাবি নামাজ আদায় করতেন। তবে তিনি কখনো এই নামাজ পড়ার জন্য দৃঢ়ভাবে আদেশ করেন নি এ কারণে যাতে উম্মতের উপর এই নামাজ ফরজ না হয়ে যায়।
সহীহ বোখারি শরীফের ১৯০১ নম্বর হাদিস অনুযায়ী রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও নেকি হাসিলের উদ্দেশ্যে পবিত্র রমজানের রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আলহামদুলিল্লাহ! এ থেকেই বুঝতে পারছেন এটি কত বরকতপূর্ণ একটি ইবাদত। কাজেই আমরা যেন কেউ পবিত্র রমজান মাসে এই তারাবির নামাজের মাধ্যমে গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হই।
এছাড়াও বোখারি শরীফের ৯২৪ নম্বর হাদিস অনুযায়ী, রাসূল (সাঃ) একবার মসজিদে নববীতে তারাবির নামাজ আদায় করেন। উপস্থিত মুসল্লিরাও তার সাথে নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় দিনেও সবাই একসাথে নামাজ আদায় করেন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে রাসূল (সাঃ) তাদের সাথে যোগ দেন নি। পরবর্তীতে তিনি উল্লেখ করেন, শুদু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের উপর উহা ফরজ করে দেয়া হয়। এ থেকেই বোঝা যায় তারাবির নামাজের গুরুত্ব কতখানি।
শেষ কথা
এই রমজান মাস আমাদের গুনাহ থেকে মাফ লাভের সুবর্ণ সুযোগ। কাজেই মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পূর্ণভাবে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।